Wednesday, March 27, 2013

National News

শাহবাগ আন্দোলনের রহস্য
লিখেছেন লিখেছেন সুহৃদ আকবর ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৯:১৬ সকাল

১০ জানুয়ারী। সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিট। মাঘের শেষ সময়। শীত নেই। পাবলিক লাইব্রেরী থেকে শাহবাগ মোড়ে গেলাম। চারিদিকে গগণবিদারী স্লোগানের আওয়াজ। ভয়ংকর একটা পরিবেশ। মাইকে নানান আইটেমের গান-বাজনা বাজানো হচ্ছে। তরুণ-তরুণীরা প্রায় উদোম হয়ে নাচানাচি করছে। হিং¯্র হয়ে নাচানাচি করছে। নর্তকীর মত নাচানাচি করছে। তাদের একটাই দাবী কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। রাজাকারের ফাঁসি চাই। কেননা যাবজ্জীবনের রায়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। সব রাজাকারদের ফাঁসি দিতেই হবে। না হয় তারা ঘরে ফিরে যাবে না।

পিতা-মাতা অবুঝ সন্তানকে কোলে করে নিয়ে এসেছেন এখানে। তাদের কপালে বাঁধারাজাকারের ফাঁসি চাইকাপড়। ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি সোচ্চার। শয়তান মনে হয় মেয়েদেরকে বেশি আক্রান্ত করতে পারে। বেহেস্তে বিবি হাওয়াকে প্রথম পথভ্রষ্ট করেছিল। আমি আগে মনে করতাম ছেলেদের চাইতে মেয়েরা কম বুদ্ধিমান। কিন্তু না শাহবাগের মেয়েদের ডাক শুনে আমার সে ভুল ভেঙে গেল। বরং এখানে মেয়েদের ভূমিকা দেখে আমার কাছে মেয়েদেরকে মোটেও কম বুদ্ধিমান বলে মনে হয়নি বরং অনেক বেশি পরিশ্রমি অনেক বেশি হিং¯্র অনেক বেশি বুদ্ধিমতীই মনে হয়েছে। তাদের স্লোগান, ফাঁসি-ফাঁসি চিৎকার শুনে এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। পরক্ষনেই আবার ভাবলাম, আসলেই তারা বোকার হদ্দ। কেননা এখানে যারা চিৎকার চেঁছামেচি করছে তারা আসলে জানে না তারা কি করছে। প্রথমত: এটা স্পষ্ট পর্দার লঙ্ঘন। নির্লজ্জতার প্রকাশও বটে কোনো বংশধরা সৎকর্মশীলা মেয়ের আচরণ এমন হতে পারে না। যদি তাই হয় তাহলে তারা কি করে বুদ্ধিমান হল। আমাদের প্রিয় নবী করিম (সঃ) বলেছেন, ‘ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ () বলেছেন, মহিলারা হচ্ছে পর্দায় থকার বস্তু। যখন সে (পর্দা উপেক্ষা করে) বাহিরে তখন শয়তান তাকে সু-সজ্জিত করে দেখায়। (তিরমিজী:১০৯৩)

গত তারিখ, ২০১৩ ইং। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন শাস্তির রায় ঘোষণার পর থেকে শাহবাগ দখল করে নিয়েছে ডিজুস তরুণ তরুণীরা। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, কারা এই তরুণ-তরুণী। তারা আসলে কি চায়? সত্যিই কি তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়; নাকি সরকারের লেজুড় বৃত্তি করতে চায়? নাকি তারা সাধারণ পাবলিক। অন্য দল-বিএনপি, জামায়াতের লোক কি এখানে নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে কত পার্সেন্ট। এসব চিৎকার চেঁছামেচির জন্য তারা কি টাকা পয়সা পাচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর আমার মনে যেমন দেখা দিয়েছে তেমন সাধারণ মানুষের মনেও দেখা দিয়েছে। আমি অধম তাই এসব জটিল-কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে হাজির হয়েছি। মানুষের সাথে কথা বলে যা জানতে পারলাম তা হল। এসব তরুণ-তরুণীর অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের কর্মী। মানে ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের। সাধারণ মানুষ যে এতে নেই তা বলা যায় না। ওখানে সাধারণ মানুষ যারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে ব্যাপকহারে জামায়াত-শিবিরের লোকজন রয়েছে। তারা গেছে তাদের বিরুদ্ধে কি বলা হচ্ছে তা স্বচক্ষে দেখার জন্য। আর একটা অংশ ওখানে গেছে তামাশা দেখার। এমন কচি-কাচা, নাদুস-নুদুস, তরুণ-তরুণী সুন্দর যুবক-যুবতী একসাথে আর কোথায় কবে দেখা গেছে এমন নির্লজ্জভাবে। এমন বেহায়াপনাভাবে। সে এক রোমান্টিক পরিবেশ। বুকে কাঁপন তুলে। দোলা দেয় মন। সে জন্য এখানে রিকসাওয়ালারা গিয়েছে তাদেরকে দেখার জন্য। পতিতালয়ে না গিয়ে খদ্দরেরা সেখানে গিয়েছে মনরঞ্জনের জন্য। তরুণ তরুণীদের মধ্যে যারা চিৎকার চেঁছামেছি করছে তারা বড় অংকের মায়না পাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর একটা অংশ ওখানে গেছে তারা হলে প্রেমিক যুগল। তারা এখানে এসে ডেটিং পর্ব সেরে নিচ্ছে। দুপুরে বিরানীর প্যাকেট পাচ্ছে। ঔষধ পাচ্ছে। মোবাইল টয়লেট পাচ্ছে এসব কম কিসে। অনেকে আবার গভীর রাত পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে। রাত যত গভীর হয় এসব তরুণ-তরুণীরাও একে অন্যের কাছাকাছি চলে যায়। এক সময় মিলেমিশে সব একাকার হয়ে যায়। উঁচু নিচু ব্যবধান থাকেনা। তখন সব সমান আর সমান। খালি শান্তি আর শান্তি।

এক কাদের মোল্লা কি করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছে-তা ভেবে আমি অবাক হই। আশ্চর্য হই। কি এমন শক্তি কাদের মোল্লার! তার হাত কত লম্বা! তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হলো কেনো তাকে ফাঁসিই দিতে হবে। এমনটাই চাওয়া এসব তরুণ-তরুণীর। তরুণ-তরুণীতো নয়ই তারা আসলে সবাই ছাত্রলীগ-যুবলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী। কেউ কেউ বলেছেন আন্দোলনকারীদের জন্য বড় অংকের টাকা ছিটানো হচ্ছে। যদিও সরকার দাবী করছে তারা কোন টাকা-পয়সা খরচ করছে না। কিন্তু রাজনৈতিক সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝেন টাকা ছাড়া এত লোকের জমায়েত সম্ভব নয়। এটা পাগলেও বুঝে। টাকা খরচ করা হচ্ছে তবে খুবই গোপনীতা রক্ষা করা হচ্ছে। যাতে কেউ জানতে না পারে। জানলে যে জাত যায় যায় অবস্থা হবে। আর এই টাকার যোগান দুই ভাবে করা হচ্ছে।

এক: আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য বিপুল অংকের টাকা বাজেট করেছিল সে টাকা। দুই: ভারতীয় এর এজেন্ট ইহুদী-নাসারা গোষ্ঠীর দল তারা চায় একটা ঠুনকো ইস্যু তৈরী করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিতে। জামায়াত-শিবির যেহেতু দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল দল, বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশী বিদেশী এজেন্টরা চায় যুদ্ধাপরাধ মামলার নাম করে দেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের বড় বড় নেতাদেরকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চায়। এই আন্দোলন হচ্ছে একটা নাটক মাত্র। শাহবাগ হচ্ছে সেই আন্দোলনেরই রঙ্গমঞ্চ। আর দেশের সাধারণ জনগণ চুপচাপ সবকিছু প্রত্যক্ষ করছে। সময় হলে তারা এর ঠিকই জবাব দিয়ে দেবে। প্রয়োজন একটা সুযোগ মাত্র। আর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে।

রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে জামায়াত-শিবিরকে আগের তুলনায় বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বিএনপিকে সরাসরি কোন বক্তৃতা বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, তারা মামলাকে ভয় পায়। সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থবাদী। শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়। যদি বিএনপি যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে প্রহসনের বিচারের সরাসরি বিরোধীতা না করে তাহলে দেশের মানুষের কাছে তারা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে শক্তিহীন হয়ে পড়বে। আর সরকার যদি এই ভেবে থাকে যে একটা আন্দোলন ইস্যু তৈরী করে আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসি দিয়ে দিবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে এবং এটা হবে তাদের জন্য মারাতœ ভুল। এবং রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয়ও বটে। দেশে তৈরী হবে এক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। দেশ এগিয়ে যাবে গৃহযুদ্ধের দিকে। এখন দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা দেশের সাধারণ জনগণ তা চাই না। আমরা সবুজ দেশটাকে অনেক ভালবাসি। এদেশের আলো-বাতাস-কাদামাটি গায়ে মেখে আমরা বড় হয়েছি। এদেশ ছাড়া আমাদের আর কোনো ঠিকানা নেই। ছোট্ট দেশকে নিয়েই আমরা ভালবাসা জাল বুনি।
বিষয়: বিবিধ

Translate